মনমোহন সিং কে ছিলেন ? ডঃ মনমোহন সিং এর জীবনী

ডঃ মনমোহন সিং কে ছিলেন ?

ডঃ মনমোহন সিং ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ এবং ভারতের ১৩তম প্রধানমন্ত্রী। তিনি ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মনমোহন সিং ভারতের প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং তাঁর শাসনামলে ভারত আর্থিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি লাভ করে।  দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী তথা শিক্ষাবিদ মনমোহন সিংহ। শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ৯২ বছর বয়সে ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ রাত ৯টা ৫১ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। আজ তাঁর জীবন পুস্তিকার বিভিন্ন পাতা উল্টে দেখবার সময়।  


মনমোহন সিং ছবি

তাঁর পরিচয় ও অবদান:

অর্থনীতিবিদ: ডঃ মনমোহন সিং একজন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ভারতের অর্থনৈতিক উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ এবং বিশ্বায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে।

রাজনীতিবিদ: কংগ্রেস দলের নেতা হিসেবে রাজ্যসভায় দীর্ঘদিন প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে চালু হয় বহু সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্প, যেমন মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন (MGNREGA)।

প্রধানমন্ত্রী: তাঁর নেতৃত্বে ভারত অর্থনৈতিক, বৈদেশিক নীতি এবং পরমাণু শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করে। ২০০৮ সালে ভারত-আমেরিকা পারমাণবিক চুক্তি ছিল তাঁর সরকারের একটি বড় কৃতিত্ব।

সৎ ও নিরহংকারী ব্যক্তি: মনমোহন সিং তাঁর সততা, বিনয় এবং নীতি-নিষ্ঠা জন্য পরিচিত। তাঁর জীবনের সহজ সরলতা এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা অনেককে অনুপ্রাণিত করেছে।

ড. মনমোহন সিং ভারতের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ এবং দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর নেতৃত্ব এবং পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি ভারত ও বিশ্বের অর্থনৈতিক নীতিমালায় অমূল্য অবদান রেখেছেন।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা


মনমোহন সিং ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান পাকিস্তানের) পাঞ্জাব প্রদেশের গাহ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা গুরুবখশ সিং এবং মাতা অমর কৌর। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তাঁর পরিবার ভারতীয় পাঞ্জাবে চলে আসে।

মনমোহন সিং-এর প্রাথমিক শিক্ষা পাঞ্জাবের চণ্ডীগড়ে সম্পন্ন হয়। এরপর তিনি চণ্ডীগড়ের গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রিনিটি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.ফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল “India’s Export Performance”।

পেশাগত জীবন


মনমোহন সিং একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন। তিনি দিল্লি স্কুল অফ ইকোনমিকসে অধ্যাপনা করেন এবং পরবর্তীকালে জাতিসংঘে কাজ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯১ সালে, ভারত যখন অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি. ভি. নরসিমা রাও তাঁকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিং ভারতের অর্থনীতিকে উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ এবং বিশ্বায়নের মাধ্যমে নতুন দিশা দেখান। এই পদক্ষেপগুলির কারণে ভারতীয় অর্থনীতি ধীরে ধীরে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে একীভূত হয়।

রাজনৈতিক জীবন


মনমোহন সিং ১৯৯১ সালে রাজ্যসভায় মনোনীত হন এবং দীর্ঘদিন রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) নির্বাচনে জয়লাভ করে। দলের চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করেন।

প্রধানমন্ত্রীত্ব (২০০৪-২০১৪)


মনমোহন সিং ২০০৪ সালে ভারতের ১৩তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি ভারতের প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রী। তাঁর নেতৃত্বে ভারত বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি করে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন


মনমোহন সিং-এর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় ভারতের জিডিপি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। তথ্যপ্রযুক্তি, উৎপাদন এবং পরিসেবা খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। তাঁর নীতির ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্প


মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বে চালু হওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে “মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন” (MGNREGA), “জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন” এবং “ভারত নির্মাণ” প্রকল্প। এই উদ্যোগগুলি গ্রামীণ উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পররাষ্ট্রনীতি


পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও মনমোহন সিং দক্ষতার পরিচয় দেন। তাঁর আমলে ভারত-আমেরিকা পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ভারতের পরমাণু শক্তি ব্যবহারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্যও তিনি উদ্যোগী ছিলেন।

সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জ


তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে (২০০৯-২০১৪) সরকার দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক অদক্ষতার অভিযোগে সমালোচিত হয়। ২জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি, কোলগেট কেলেঙ্কারি এবং কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারি তাঁর সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবুও, তাঁর সততা এবং ব্যক্তিগত চরিত্র প্রশ্নাতীত থেকে যায়।

ব্যক্তিগত জীবন


মনমোহন সিং-এর স্ত্রী গুরশরণ কৌর, যিনি সর্বদা তাঁর পাশে ছিলেন। তাঁদের তিন কন্যা: উপিন্দর সিং, দমন সিং এবং অমৃতা সিং। উপিন্দর সিং একজন ইতিহাসবিদ এবং দমন সিং লেখক। মনমোহন সিং অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করেন এবং তাঁকে একজন বিনয়ী ও নিরহংকারী মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা


  • ড. মনমোহন সিং তাঁর জীবনে বহু সম্মাননা ও পুরস্কার অর্জন করেছেন।
  • ১৯৮৭ সালে তিনি পদ্মবিভূষণ পুরস্কার পান।
  • ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করে।
  • তাঁকে "গ্রেটেস্ট ইন্ডিয়ান অ্যাওয়ার্ড"-এ সম্মানিত করা হয়েছে।

উত্তরাধিকার


মনমোহন সিং একজন সৎ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা হিসেবে চিরস্মরণীয় থাকবেন। অর্থনীতির ক্ষেত্রে তাঁর নেওয়া সংস্কারমূলক পদক্ষেপ ভারতের আর্থিক অবকাঠামোকে শক্তিশালী করেছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর শাসনামল ভারতের ইতিহাসে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

উপসংহার


মনমোহন সিং শুধুমাত্র একজন রাজনীতিবিদ নন, তিনি একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ এবং সৎ মানুষ। তাঁর নীতিগত অবস্থান এবং নিরলস পরিশ্রম ভারতের উন্নয়নে অপরিসীম ভূমিকা রেখেছে। তাঁর জীবনী আমাদের জন্য শিক্ষণীয় এবং অনুপ্রেরণার উৎস।


✓আরও জীবনী দেখুন :

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

WB স্টাডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url